জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। বুধবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও প্রধান সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ঘৃণার রাজনীতির কবর দেওয়া হোক। এটা যেন আর না বাড়ে। আমরা চাই বিভাজনের রাজনীতিরও সমাপ্তি হোক।’
জামায়াতে ইসলামী কোনো ইস্যুতে জাতির বিভক্তিকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে আমরা চাই জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক।’ দেশে সম্প্রীতি ও সমষ্টিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তাদের কেউ কেউ চেয়েছিল, এ ধরনের কিছু ঘটলে জামায়াতে ইসলামী সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করবে। তখন তাকে কেন্দ্র করে অন্য কিছু ঘটবে। আন্দোলনের গতি অন্যদিকে ঘুরবে…বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হবে।’
আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির। তিনি আরও যুক্তি দেন, এই জাতীয় পদক্ষেপগুলো একটি ইস্যুকে অন্য ইস্যু দিয়ে চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হতে পারে, যার ফলে ভিন্নমতের আন্দোলন ব্যাহত হয়।
জামায়াতের প্রধান আরও বলেন, তাঁর দল কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না এবং ‘সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যারা সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। অন্যথায় সমাজের কোনো সংশোধন হবে না। অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
ঢালাওভাবে অভিযোগের অনুশীলনেরও সমালোচনা করেন শফিকুর রহমান। বিশেষত একটি হত্যা মামলার কথা উল্লেখ করেন যেখানে ৫০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, গণ–অভিযোগ প্রকৃত অপরাধীদের বিচার থেকে বাঁচতে সুযোগ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘এত মামলার দরকার নেই। মানুষকে সংশোধন করার জন্য কিছু প্রতীকী ঘটনাই যথেষ্ট।’ কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত না হন, তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের আহ্বান জানান জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সবাই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করুক। এটা আমাদের অবস্থান, শুধু ভারতের জন্য নয়, সবার জন্য। বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করুন, কিন্তু জবরদস্তি করার চেষ্টা করবেন না। আমাদের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন…আমরা সবার কাছে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চাই।’
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি এটি রেকর্ডে রাখবেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদসহ জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতারা।