ভারতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করার বার্ষিক হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও আত্মহত্যার সার্বিক প্রবণতাগুলোকে ছাপিয়ে গেছে। গতকাল বুধবার আইসিথ্রি কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সপো-২০২৪–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্যের ভিত্তিতে আইসিথ্রি ইনস্টিটিউট ‘স্টুডেন্ট সুইসাইডস: অ্যান এপিডেমিক সুইপিং ইন্ডিয়া’ নামের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে বছরে মোট আত্মহত্যার হার ২ শতাংশ বেড়েছে। আর শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বেড়েছে ৪ শতাংশ।
২০২২ সালে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ। ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ৬ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে শূন্য থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৫৮ কোটি ২০ লাখ থেকে কমে ৫৮ কোটি ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫৪ থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৪৪–এ দাঁড়িয়েছে।
আইসিথ্রি ইনস্টিটিউট স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক একটি সংস্থা। তারা বিশ্বজুড়ে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালক ও কাউন্সেলদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ। ভারতে শিক্ষার্থীদের মোট আত্মহত্যার হার যত, তার এক-তৃতীয়াংশই এ তিন রাজ্যে হয়। ভারতের দক্ষিণের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো মিলে আত্মহত্যার মোট হার ২৯।
রাজস্থানে শিক্ষার উচ্চ মানসম্পন্ন পরিবেশ আছে বলে মনে করা হয়। এ রাজ্যও শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে দশম অবস্থানে আছে।
পুলিশের এফআইআর থেকে আত্মহত্যাসংক্রান্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে এনসিআরবি। ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে সামাজিকভাবে হেয় হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে আত্মহত্যার তথ্য জানাতে চান না। তা ছাড়া ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩০৯ ধারা অনুযায়ী আত্মহত্যার চেষ্টা কিংবা আত্মহত্যায় প্ররোচণাকে অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
তবে ২০১৭ সালে মেন্টাল হেলথকেয়ার অ্যাক্ট অনুযায়ী, মানসিক অসুস্থতা থাকা ব্যক্তিদের আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয় না।
আইসিথ্রি মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা গণেশ কোহলি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে জরুরি ভিত্তিতে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা এ প্রতিবেদনই মনে করিয়ে দিচ্ছে।