সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যৌথ অংশগ্রহণের পেছনে পরোক্ষ কারণ হিসেবে কাজ করেছে আওয়ামী সরকার ও তার সহায়ক শক্তিগুলোর অব্যাহত আধিপত্য ও নিপীড়ন। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের প্রশ্ন তুলেছেন।
গণতন্ত্র, নির্বাচন কিংবা বহুদলীয় মতাদর্শের সহাবস্থানবিষয়ক আলাপের ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র সংস্কারের সমান্তরালে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরেই ব্যাপ্ত হয়েছিল অভ্যুত্থানের বীজ। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সংস্কার কীভাবে সম্ভব?
বাংলাদেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ১৯৭৩ অধ্যাদেশের মাধ্যমে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটির স্বতন্ত্র আইন আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন আলাদা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন বা অধ্যাদেশের সংস্কার ছাড়া কি বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার করা সম্ভব? উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা যদি অভিন্ন লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে এতগুলো আইনের প্রয়োজন আছে কি? সত্যি বলতে কি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি বোধ করছেন। স্বীকার করি, বাস্তবতা জটিল। তবু বিভ্রান্ত না হয়ে গঠনমূলক পর্যালোচনা জরুরি। এ লক্ষ্যে তাই সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করছি:
১. অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দলীয় রাজনীতির চর্চা নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, কিছুসংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত উন্নতিতে দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় সহায়তা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কল্যাণে তা কোনো কাজে লাগে না।
ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে গত ৩০ থেকে ৪০ বছরে সংসদীয় রাজনীতিতে কোনো নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে কিংবা কোনো শিক্ষার্থী সংসদীয় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ বা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পেরেছেন—এ রকম নজির নেই বললেই চলে। অবশ্য তৃণমূল রাজনীতি বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও সাবেক উপাচার্যদের কেউ কেউ সংসদ সদস্য হয়েছেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সূত্রে তঁারা ভিসিও হয়েছিলেন।
দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক শিক্ষককে বলতে শুনেছি, অবসর-উত্তরকালে তাঁরা রাজনীতি
করতে চান। এ ধরনের শিক্ষকদের বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নয়, দল করেন। তাঁরা ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ পোষণের পক্ষে অধ্যাদেশে বর্ণিত ধারার উদাহরণ দিয়ে থাকেন। কার্যত রাজনৈতিক মতাদর্শচর্চার নামে তাঁরা ক্ষমতাকে গোষ্ঠীবদ্ধ করেন এবং শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নষ্ট করে থাকেন। দলীয় ‘রাজনীতিযুক্ত’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা ব্যাপকভাবে পরিচিত, কিন্তু দলীয় ‘রাজনীতিমুক্ত’ বিশ্ববিদ্যালয়
কেমন, বড় পরিসরে আমরা তার প্রয়োগ দেখিনি। আর তাই দলীয় রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একধরনের নিরীক্ষা চলতে পারে।