পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীসহ আমলাদের কেন্দ্র সরকার বারবার নানাভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছে এবং করছে। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকার মধ্যেই নানা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নেতা–নেত্রীরা জামিনও পাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের মামলায় ১০ লাখ টাকার বন্ডে গতকাল শুক্রবার জামিন পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও বীরভূম জেলার সাবেক সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

এ রকম পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তিরস্কার করলেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতই কি শত্রু? পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে, সিবিআইয়ের এই অভিযোগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এক বিচারপতি অভয় ওকা বলেন, ‘বাংলার পুরো বিচারব্যবস্থাই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে রয়েছে? আপনারা কি বলছেন যে সেখানকার সব আদালত চোখ বুজে বেআইনিভাবে জামিন দিয়ে দিচ্ছেন?’পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর সহিংসতার মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদনের শুনানি চলাকালীন সিবিআই জানায়, পশ্চিমবঙ্গের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। সে প্রসঙ্গেই এ কথা বলেন বিচারপতি ওকা ও পঙ্কজ মিঠালের বেঞ্চ।

তাঁদের এই প্রশ্নের মুখে সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এসভি রাজু স্বীকার করে নেন যে আবেদনটির খসড়া রচনায় অনেক গাফিলতি রয়ে গেছে। তিনি আবেদনটি প্রত্যাহারও করে নেন।বিচারপতি ওকা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে বলেন, ‘আমরা যদি মামলাগুলো স্থানান্তর করি, তাহলে রাজ্যের আদালতগুলোয় বিচারের পরিবেশ নেই বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই যুক্তিকে মান্যতা দেওয়া হয়। হতে পারে আপনার আধিকারিকেরা বিচার বিভাগীয় অফিসার কিংবা কোনো নির্দিষ্ট রাজ্যের বিচারব্যবস্থাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু, কিন্তু তার জন্য এটা বলতে বলতে পারেন না যে গোটা বিচারব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জেলা জজ, দেওয়ানি বিচারক ও দায়রা বিচারকেরা তো এখানে এসে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন না।’

দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরও বলেছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কেন্দ্রীয় সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের আদালতকে এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য বেছে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে এই অভিযোগ অত্যন্ত কলঙ্কজনক অভিযোগ বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট।পশ্চিমবঙ্গের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে। এর মধ্যে অতীতের মামলা ছাড়া সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তের মামলাটিও রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআইয়ের ওপর প্রবল চাপ রয়েছে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার। সিবিআই এখন টালা পুলিশ থানার সাবেক অফিসার অভিজিৎ মন্ডলের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাতে চায়।

এ রকম পরিস্থিতিতে আদালতকে আক্রমণ করে সিবিআইয়ের আবেদন সুপ্রিম কোর্টে তিরস্কৃত হলো। বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version