জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে সবুজ শ্যামলতা। প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের্র আবাসভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সবুজ প্রকৃতির ক্যাম্পাস। পড়াশোনা ও শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি দেশ জুড়ে সুনাম রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।এবার নতুন এক চিত্রের সাক্ষী হলো। ক্যাম্পাসের মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে এসেছে ছাত্রীরা, তাদের চেহারায় উচ্ছ্বাস, আত্মবিশ্বাস এবং ক্রীড়াপ্রেমের এক নতুন সংজ্ঞা। এই প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীরা ফুটবল খেলতে মাঠে নেমেছেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী উদাহরণ।

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ‘মিশু স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট সিজন-৮’।যেখানে বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলাটি শুরু হয় বিকাল ৪টায়।  প্রতি দলে ৮ জন করে মোট ১৬ জনের খেলা হয়েছে।

প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি যেন একটি উৎসবের মতো।মাঠের পরিবেশ চনমনে, একদিকে প্রতিযোগিতামূলক উত্তেজনা, অন্যদিকে সহযোগিতার আন্তরিকতা। খেলার মাধ্যমে তারা দেখাচ্ছে, ফুটবল শুধু ছেলেদের খেলা নয়, মেয়েরা শুধু মাঠের দর্শক হবে তা নয়  বরং এটি একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা এবং যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারছে।
খেলায় অংশগ্রহণ করা দুইটি দলের নাম হচ্ছে, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফেবুলাস’ এবং  ‘কুইন কিংডম।’ খেলায় ১-০ গোলে জয়লাব করে কুইন কিংডম।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতিমা তুজ জোহরা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য কোন ফুটবল ম্যাচ আয়োজন হতে দেখি নাই।এই প্রথম দেখলাম। মেয়েরা মাঠে আসে দর্শক হিসাবে, ফুটবল খেলা শুধু দেখতে,এই প্রথমবার মেয়েরা মাঠে আসলো খেলতে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা ইতিহাস। এবং এটি একটি  ইতিবাচক পরিবর্তনেরও প্রতীক।’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এই উদ্যোগকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন এই ধরনের উদ্যোগ ছাত্রীদেরকে আরও সৃজনশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ.কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আমরা সবসময় চাই ছাত্রীরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করুক। এটি তাদের মানসিক এবং শারীরিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে ছাত্রীরাও যাতে আন্ত বিভাগ ফুটবল ম্যাচ, আন্ত হল ফুটবল ম্যাচ খেলতে পারে সেই ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগ নিবো।’

প্রীতি ম্যাচটির আয়োজক এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে গতানুগতিক ধারা ভেঙে বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রীতি ফুটবল আয়োজন করা। এই ম্যাচের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গণে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয়ভাবেই মেয়েদের ক্রীড়াঙ্গণে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রণোদনা বা সদিচ্ছা নেই। অথচ মেয়েরা ক্রীড়াঙ্গনে সমান দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে বারবার। আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহ সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করা। আমাদের মেয়েরা যে পিছিয়ে নেই। আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক মেয়ে খেলোয়ার আছে কিন্তু আমরা তাদের সুযোগ করে দিচ্ছি না। আমরা যদি তাদের সুযোগ করে দিতাম তাহলে মেয়েরাও ভালো ফুটবল খেলবে, জাতীয় পর্যায়ে খেলবে। উদাহরণস্বরূপ ফিফার রেফারি নির্বাচিত হওয়া জয়া চাকমার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া আরেকটা উদ্দেশ্য ছিলো ক্যাম্পাসে অনেক আদিবাসী মেয়ে রয়েছে। যারা খেলাধুলার প্রতি খুবই আগ্রহী। আমরা যদি তাদের সুযোগ করে দেই তাহলে তারা খেলার মাঠে আসবে। এই খেলার মাধ্যমে কিন্তু আমরা একটা সহানুভূতি সংহতির দিকে যাবো। বাঙালি – আদিবাসী নিয়ে যে বিবেদ তা অনেকাংশে কমবে। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাবো।’

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version