দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৫টি। এর মধ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থাপন করা হয়েছে শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের কয়েকজনের নামে। শুধু শেখ হাসিনার নামেই রয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিনটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে রয়েছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি মেডিক্যাল কলেজ।বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামেও রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শেখ হাসিনার দাদি শেখ সায়েরা খাতুনের নামে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ। এই বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যালগুলোর বেশির ভাগ স্থাপিত হয়েছে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরে। অনেক ক্ষেত্রে একই নামে স্থাপিত হয়েছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়।এতে বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরাও। কারণ একই নামের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে বর্তমান সরকার যত্রতত্র নামকরণ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত নীতিমালা হওয়ার পর পরিবর্তন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজগুলোর নাম।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থাপনের ক্ষেত্রে জনদাবি উপেক্ষা করে ব্যক্তি নামে করার অভিযোগও আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সরকার আগের নাম বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন। ফলে বেড়েছে এলাকাবাসীর ক্ষোভও। সংশ্লিষ্টরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। ২০২১ সালের এপ্রিলে এসে এর নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর’ নাম বদলে প্রজ্ঞাপন জারি করে শেখ হাসিনা সরকার। ক্ষমতা বদলের পর স্থানীয়রা এই মেডিক্যাল কলেজের নাম থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ লেখাটি উঠিয়ে ফেলেছেন।

তথ্যমতে, রাষ্ট্রীয় খরচে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় যত্রতত্র নামকরণ বন্ধ করতে নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। ইতোমধ্যে চার সদস্যের কমিটি কাজ করছে। এই নীতিমালা চূড়ান্ত হলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাতিল হবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম। পরে নতুন নামকরণ করা হবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নামকরণ করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮ সাল), ঢাকার মিরপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮),

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬), গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০)। এ ছাড়া আরও রয়েছে, নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), সিলেটে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮),

লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯), কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০২১), খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০২১), পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০২২) ও নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০২৩)।শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামকরণ অর্ডিন্যান্স বা আইনের মাধ্যমে করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামকরণে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে ব্যাপারে একটি কমিটি কাজ করছে। পরিবর্তন নিয়ে একটি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি হবে।

নীতিমালা হলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বদলে যেতে পারে সব প্রতিষ্ঠানের নাম। ব্যক্তি নামে এত বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ নামকরণের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে মতামত চাইলে কমিশনের সভায় বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version