সাংবাদিক ও প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক অরুণ বসুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরে এক স্মরণসভা হয়েছে। এ সময় অরুণ বসুর ছেলে মেঘ মল্লার বসু বলেন, ‘আমাদের সমস্যা হচ্ছে, “আমরা ভেঙে গড়তে পারি না, তাই সমাজে এত সংকট“। ব্যক্তিমানুষ থেকে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে এ কথা সত্য। ব্যক্তিমানুষ থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু না করলে হবে না।’

‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’—এ আহ্বানকে সামনে রেখে অরুণ বসুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে ‘অরুণ বসু পরম্পরা’। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মেঘ মল্লার বসু বলেন, ‘একটা মানুষকে কেন স্মরণ করা হয়? সময় বদলালে যে নাই, তাঁর কথা বেশি মনে পড়ে।অরুণ বসুর সঙ্গে যাঁদের দ্বিমত ছিল, তাঁদেরও তিনি বন্ধু হিসেবে মানতেন ও জানতেন। এই সমাজে আমরা সবাই যে অংশীজন—এ চেতনাকে লালন ও ধারণ করতে হবে।’

বিশিষ্ট নাট্যগবেষক বিপ্লব বালা বলেন, ‘নিজের ভেতরের থেকে বের হতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই। তা না হলে অন্যের সঙ্গে মেলা যাবে না, সম্পর্ক হবে না, সবাইকে শত্রু মনে হবে। মানুষ স্মৃতিতে বাঁচে। স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যৎ। যে যতটুকু বাঁচে, তার প্রমাণ মেলে তার মধ্যে কতজন আছে। মানুষ একলা বেঁচে থাকতে পারে না। বাঁচা মানে একা বাঁচা নয়। বাঁচতে হলে পাশে মানুষ থাকতে হবে। মানুষ ছাড়া মানুষ বাঁচে না।’

বিপ্লব বালা আরও বলেন, মানুষ দিনে দিনে সম্পর্কহীন হয়ে যাচ্ছে। বাজার, পুঁজি মানুষকে সম্পর্কহীন করে দিচ্ছে। মানুষের লড়াই সম্পর্ক বাঁচানো, সম্পর্ক বাঁচানোর জন্যই মানুষের সংগ্রাম। নিজেকে বাঁচাতে হলে স্মৃতি চাই, সম্পর্ক চাই।

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ সাংবাদিক মিজানুর রহমান, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, জেলা সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কানাই গাঙ্গুলী, সংস্কৃতিকর্মী আবু সুফিয়ান চৌধুরী, আহমেদ জালাল, লেখক সৈয়দ জুনায়েদ, জেলা খেলাঘরের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতি-বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

সংগীতশিল্পী বাদল দাসের ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘স্মরণ’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। আবৃত্তি করেন প্রয়াত অরুণ বসুর স্ত্রী কবিতা বসু।

সাংবাদিক ও প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক অরুণ বসু ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অরুণ বসু ১৯৫৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version