রাজধানীর ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড থেকে হলিক্রস কলেজ সড়ক হয়ে তেজকুনী পাড়ার কাঁঠালতলা এলাকা। রাস্তাটির আধা কিলোমিটার অংশে অন্তত ১১টি সড়কবাতি রয়েছে। গত সোমবার রাত আটটার দিকে ওই অংশের সাতটি বাতিই জ্বলতে দেখা যায়নি। কোনো কোনো অংশে পরপর দুটি বাতি বন্ধ থাকায় রাস্তার ওই অংশ পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে ছিল। সেখান দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তেজকুনী পাড়া এলাকার বাসিন্দা সোহেলি খন্দকার ও শারমিন আক্তার।

সোহেলি খন্দকার বলেন, রাস্তার এই অংশের বাতিগুলো অনেক দিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। বাতি না জ্বলায় কিছু অংশে মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে হাঁটতে হয়। এ অংশে রাস্তার দুপাশে বাসাবাড়ি–দোকানপাট না থাকায় আলোর অন্য উৎসও নেই। রাতে চলাচলের সময় ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন কেউ অপকর্ম করে বসে। রাস্তায় আলো থাকলে অন্তত ভয় করত না বলে জানান তিনি।ফার্মগেট-তেজকুনী পাড়ার ওই সড়কের বাতি ছাড়া আরও অনেক এলাকার ছোট-বড় রাস্তা, প্রধান সড়ক, অলিগলি ও উড়ালসড়কের বাতিগুলো নষ্ট হয়ে আছে। গভীর রাতে দোকানপাটের আলো নিভে গেলে কিংবা যান চলাচল কমে গেলে রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া অন্ধকারে হোঁচট খাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটে।

মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসড়ক, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, প্রগতি সরণি, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণি, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণিসহ ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকার অনেক গলিপথে সড়কবাতি বন্ধ দেখা গেছে।গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত গুলশান অ্যাভিনিউতে ৯৩টি বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কেই ৬১টি বাতি বন্ধ ছিল। গুলশান-২ থেকে কাকলি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে অন্তত ৩৭টি সড়কবাতি বন্ধ ছিল। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণিতে ৫৬টি সড়কবাতি বন্ধ দেখা গেছে। এসব সড়কে কিছু দূর পরপর দু-একটি খুঁটিতে বাতি জ্বলে, তারপর আবার অন্ধকার।

বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, ঢাকা উত্তর সিটিতে বর্তমানে মোট ৪৫ হাজার ৩৯৮টি সড়কবাতি রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট বা বন্ধ বাতি রয়েছে ১ হাজার ৭২৫টি, যা মোট সড়কবাতির ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত ১ মাসে ১ হাজার ৮৭৬টি সড়কবাতি মেরামত করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।বিদ্যুৎ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ৫টি অঞ্চলের সড়ক ও অলিগলিতে এলইডি সড়কবাতি রয়েছে। এর মধ্যে অঞ্চল ১–এর ৮ হাজার ১০৩টি বাতির মধ্যে ৫১৫টি বাতি নষ্ট, অঞ্চল ২–এর ১০ হাজার ৫২৩টি বাতির মধ্যে ২০০টি বাতি নষ্ট, অঞ্চল ৩–এর ৮ হাজার ৯০৫টি বাতির মধ্যে ৪০০টি বাতি, অঞ্চল ৪–এর ৯ হাজার ৩৩৯টি বাতির মধ্যে ১৪০টি বাতি এবং অঞ্চল ৫–এর ৯ হাজার ৬৮টি বাতির মধ্যে ৫৭০টি বাতি নষ্ট।

এ ছাড়া গত আগস্টে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কবাতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে কিছু এলাকায় সড়কবাতির খুঁটি ও বাতি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। কিছু এলাকায় বাতি পরিচালনার ডেটা কমিউনিকেশন ইউনিট (ডিসিইউ) বক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণে অনেক এলাকায় বাতি নষ্ট হয়েছে।

খামারবাড়ি থেকে পশ্চিম রাজাবাজারে যাওয়ার রাস্তা ইন্দিরা রোডের টিঅ্যান্ডটি মাঠ থেকে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাস জামে মসজিদ অংশে চারটি সড়কবাতি নষ্ট দেখা গেছে। ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন তল্লাবাগের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, গাড়ির আলো না থাকলে মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে চলতে হয়। অনেক রাত হলে ভয় করে। এমনিতেই দেশে পুলিশ–প্রশাসন নেই বললেই চলে। এর মধ্যে অন্ধকারে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, ঠিক নেই। সড়কবাতি থাকলে এ সমস্যা হতো না।
ঢাকা উত্তর সিটির বিদ্যুৎ শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কবাতি সরবরাহকারী ঠিকাদার ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির একদল কর্মী প্রতিনিয়ত নষ্ট বাতি খুঁজে বের করেন এবং বাতি পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা নেন। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বাতিগুলো প্রতিদিনই রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি, বজ্রপাত, ওভার ভোল্টেজসহ নানা কারণে বাতিগুলো নষ্ট হয় বা বন্ধ থাকে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version