শিহাব উদ্দিন চৌধুরী

স্পোর্ট প্রতিনিধি

এটি রিয়াল মাদ্রিদের এক অসাধারণ জয়ের গল্প, যা ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
২০২২ সালের ইউইএফএ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল। সান্তিয়াগো বার্নাবেউ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল ফুটবল জগৎ এর নাটকীয়তার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে রিয়াল মাদ্রিদ ১% জয়ের সম্ভাবনা নিয়েও প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে নেয়।
প্রতিপক্ষ ম্যানসিটি প্রথম লেগে ৪-৩ গোলে জয় পায় এতিহাদ স্টেডিয়ামে।
টান টান উত্তেজনাময় দ্বিতীয় লেগের প্রথম হাফে কোন গোল হয় না, কিন্তু ৭৩ মিনিটে রিয়াদ মাহরেজের গোলে ম্যানসিটি ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়, অ্যাগ্রিগেট স্কোর, সিটি ৫ মাদ্রিদ ৩।
প্রথম গোলের পর ম্যানচেস্টার সিটি আরও চাপ সৃষ্টি করতে থাকে, এবং হয়তো ৮৭ মিনিটেই জ্যাক গ্রেয়ালিশ ম্যাচটি শেষ করে দিতেন তবে, ফেরল্যান্ড মেন্ডির এক গুরুত্বপূর্ণ গোললাইন ক্লিয়ারেন্সে মাদ্রিদের আশা জীবিত থাকে। তার এই দৃঢ়তা দলের আত্মবিশ্বাস যেন বাড়িয়ে দেয়।
৮৮ মিনিটে ডিজিটাল বোর্ডে মাদ্রিদের জয়ের সম্ভাবনা দেখানো হয় মাত্র ১%, যা সমর্থকদের চিন্তিত করে তোলে। তবে, সেইদিন মাদ্রিদের এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয় তাদের উপর ভরসা রাখা সকল সমর্থক।
ঠিক ২ মিনিট পর, অর্থাৎ ৮৯ মিনিটে কার্লো আনচেলোত্তি, ব্রাযিলিয়ান ফরওয়ার্ড রদ্রিগোকে মাঠে নামান, যা হয়তো ইতিহাসের শেরা সাবস্টিটিউশন গুলোর মধ্যে একটি হয়ে থাকবে।
মাঠে প্রবেশ করার সাথে সাথে, বেঞ্জেমার একটি অসাধারণ ফার্স্ট টাচ ক্রস থেকে গোল করে রদ্রিগো। এই গোলে অ্যাগ্রিগেট স্কোর দারায় ৫-৪, সিটি তখনও লিডে।
তবে, নাটক এখানেই শেষ হয়নি। ৯১ মিনিটে দানি কারভাহালের একটি নিখুঁত ক্রস খুঁজে পায় বিস্ময় বালক রদ্রিগো কে, চমৎকার এক হেডে নিমিশেই বল ম্যানচেস্টার সিটির জ্বালের ভীতর, শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচের স্কোর তখন সমতায় (৫-৫)। বার্নাবেউয়ে উৎসবের স্রোত বয়ে যায়, এবং মাদ্রিদ জীবন্ত হয়ে উঠে, খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ৯৩ মিনিটে বেনযেমা কে পেনাল্টি বক্সে ফাউল করেন রুবেন দিয়াস। ডান পায়ের পেনাল্টি শটে নিচের ডান কোণে বল পাঠান বেনযেমা, যা ছিল এদারসনের নাগালের বাইরে, এটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট, এই প্রথম মাদ্রিদ ম্যাচে এগিয়ে যায়, অ্যাগ্রিগেট স্কোর হয় ৬-৫।
ম্যাচের শেষে রিয়াল মাদ্রিদ দুই লেগ মিলিয়ে, ৬-৫ ব্যবধানে জয়ী হয়, যা কেও কল্পনাও করে নেই, গারদিওলা হয়তো তখন ভাবছিলেন এই মাদ্রিদ কে, কেও কিভাবে হারাবে জারা কিনা শেষ ৩ মিনিটে ৫-৩ এর পরাজয় থেকে, ম্যাচ শেষে ৬-৫ গোলের জয় ছিনিয়ে নেয়।
মাদ্রিদের ইতিহাসে এটি একটি অসাধারণ অধ্যায়, কেননা মাদ্রিদ অনেক ম্যাচ জিতেছে তবে, এইরকম একটা ম্যাচ, যেখানে সকলেই নিশ্চিত ছিলেন যে মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রা শেষ, সেই নিশ্চয়তাকে ধুলিস্যাৎ করে দেয় মাদ্রিদ।
এই ম্যাচটি রিয়াল মাদ্রিদের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং অদম্য বিশ্বাসের প্রতীক। এই ম্যাচে শুধু ১১ জন খেলোয়াড়ই নন, খেলেছেন প্রত্যেকটা মাদ্রিদিস্তা, যারা শেষ সময় পর্যন্ত বিশ্বাস করে গিয়েছেন মাদ্রিদ পারবে আর সেটাই করে দেখায় মাদ্রিদ।
শেষ বাঁশি বাজতেই খেলোয়াড়রা মাঠে উদযাপন করে, সমর্থকরা মেতে ওঠে উল্লাসে এবং পুরো সান্তিয়াগো বার্নাবেউ পরিণত হয় এক মহোৎসবের মেলায়। কিংবদন্তী এই ক্লাবের “লা ১৪” এর পথে এই অবিস্মরণীয় ম্যাচ ও দৃঢ় মনোবল ফুটবল ভক্তদের মনে থাকবে চিরকাল।
রিয়াল মাদ্রিদ তাদের জয়ের এই যাত্রা অব্যাহত রাখে এবং তাদের ইউরোপীয় ফুটবলের একক আধিপত্য নিশ্চিত করে ও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দেয় রেকর্ড ১৪ তম বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জিতে। এই জয়ের মাধ্যমে তারা আবারও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় কেন তারা “ম্যাজিকাল মাদ্রিদ” এবং কেন তাদের বলা হয় “দ্যা গ্রেট হোয়াইটস”।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version