বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের কাছে ‘ব্যাখ্যা তলব’ করেছে বিএনপি। পৃথক চিঠিতে তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে আজ সোমবার এবং খায়রুল কবিরকে গতকাল রোববার এই তলব চিঠি দেওয়া হয়।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গত বুধবার বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে নিজ এলাকা কক্সবাজারের পেকুয়ায় গিয়ে সংবর্ধনা নেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হওয়ার পর নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চান। অবশ্য এস আলম ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর গাড়ি চড়ার ঘটনাকে ‘অসাবধানতা’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত’ উল্লেখ করে দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে তিনি আজ দুপুরে গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।

এদিকে আরেক বিতর্কিত ডায়মন্ড ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সঙ্গে গুলশানের একটি হোটেলে বৈঠক করেন খায়রুল কবির। এ ঘটনা প্রকাশ পেলে বিএনপি তাঁর কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে।

খায়রুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো গোপন বৈঠক করিনি। আমি সেখানে গিয়েছিলাম বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রটোকল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে। সেখানে আমার এক আত্মীয় বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাবেক সভাপতি দোলন আগারওয়ালার সঙ্গে পরিচয় করান, যাঁকে এর আগে জীবনে কখনো দেখিনি। তাঁদের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরোধ। কারণ, জুয়েলারি সমিতি বসুন্ধরা দখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা বিএনপির সহযোগিতা চান। তাঁরা মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ চান আমার মাধ্যমে। আমি তাঁদের অপারগতা জানিয়েছি।’

খায়রুল কবির দাবি করেন, সেখানে আরও অনেক লোকজন ছিলেন। হোটেলের সিসিটিভি দেখলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সালাহউদ্দিনের দুঃখ প্রকাশ

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে কক্সবাজারে সংবর্ধনা নিতে যাওয়ার ঘটনায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর পর নিজ জেলা কক্সবাজারে গেলে আমার দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে আমি একটি গাড়ি ব্যবহার করেছি, যে গাড়ি একটি কোম্পানির; যা এস আলম কোম্পানির বলে সংবাদ লেখা হয়েছে। আমি কোন গাড়িতে উঠেছি, সেটা আমি নিজেও জানতাম না। আমি তখন অনেকটা আবেগে আপ্লুত ছিলাম, আমার দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিলাম এবং মনের মধ্যে মা-বাবার কবর জিয়ারতের বাসনায় মগ্ন ছিলাম। তখন আমার মনের অবস্থা ছিল না যে আমি কোন গাড়িতে কার গাড়িতে উঠছি…।’

গাড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি জানতে পারলাম, গাড়িটি আমার এলাকার এক ছোট ভাইয়ের, যে ওই কোম্পানিতে (এস আলম) বিভিন্ন জমিজমা দেখাশোনার কাজ করে এবং কোম্পানি থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের জন্য এই গাড়ি দেওয়া হয়। সে–ও অন্য সকলের মতো আমাকে বরণ করার জন্য এয়ারপোর্টে গেছে…তার গাড়িতে করেই গেছি। সেও জানত না আমি তার গাড়িতে উঠব, আমিও জানতাম না যে আমি কার গাড়িতে উঠব। এটা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঠিক করেছে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারপরও আমার এই অসাবধানতা এবং এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি আমি দেশবাসীর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি এবং অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি, সে জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

একটি গণমাধ্যমে গাড়িচালক তাঁর পরিচিত বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই কথা আমি ওই পত্রিকার রিপোর্টারকে বলিনি। এটা কীভাবে লিখেছেন, আমি জানি না। এটা মিস কোড করা হয়েছে।’

Share.
Leave A Reply