নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদোন্নতি প্রাপ্ত আটজনের বেতন-ভাতা স্থগিত করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী। রবিবার (২২ই সেপ্টেম্বর) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগস্ট-২০২৪ মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি।

তারা হলেন- সংস্থাপন শাখার ড. জিয়াউল হক, মোস্তাফিজার রহমান মন্ডল, জনসংযোগ দপ্তরের মোহাম্মদ আলী, পবিহন পুলের তাপস কুমার গোস্বামী, কাউন্সিল শাখার ময়নুল আযাদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের ফিরোজুল ইসলাম, সিডিটির এস এম আব্দুর রহিম ও উপাচার্য দপ্তরের খায়রুল ইসলাম।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ৯ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমানের পদে (৪র্থ গ্রেড) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ।২৯ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত ১০৫তম সিন্ডিকেটে পদোন্নতির বিষয়টি অনুমোদন করেন সাবেক ভিসি। অপর দিকে অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে উম্মে ফারহানা চৌধুরীকে পদোন্নতি পেয়েও যোগদান করতে পারেননি। 

নথিপত্র থেকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেডের পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি।যাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন বা পর্যায়োন্নয়ন দেওয়া যাবে না। 

ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবির সাবেক ভিসি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রথমবার কর্মকর্তাদের চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই বোর্ডের আয়োজন করেছিলেন।বিষয়টি ইউজিসির নজরে আসলে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল। 

এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারো এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।

ইউজিসির নিষেজ্ঞার কারণে অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘চাকরি (স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ) (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫-এর অনুচ্ছেদ ১২’-এর ভুল ব্যাখাপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণকে চতুর্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করলে কমিশন দুই দফা চিঠি দিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়াটিও বাতিল হয়ে যায়। এরপর ৩০ মে তারিখে প্রেরিত ইউজিসির ষষ্ঠ দফা চিঠি উপেক্ষা করে ৩১ মে ২০২৪ তারিখে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমানের পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাইবোর্ড সম্পন্ন করেছিলেন সাবেক উপাচার্য।পদোন্নতি প্রদানের জন্য গঠিত বাছাই বোর্ডটিও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পঞ্চম গ্রেডের উপসচিব এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম ছিলেন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকতাদের পদোন্নতি বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য, আবার সাবেক ট্রেজারার ড. মজিব উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ও ট্রেজারার হিসেবে দুইটি স্বাক্ষর করেছেন।  

এই ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বোর্ড পুর্নগঠনসহ অবৈধভাবে পদোন্নতি প্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন সংক্ষুব্ধ পাঁচজন কর্মকর্তা। রিট শুনানি শেষে ২৪ জুলাই হাইকোর্ট স্ট্যাটাস ক্যু দেন। হাইকোর্টের আদেশ সত্ত্বেও সাবেক ভিসি আটজন কর্মকর্তাকে জুলাই মাসে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে বেতন প্রদান করেন এবং তাদের মধ্যে ড. জিয়াউল হককে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে  রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও দিয়েছিলেন। 

বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর হাইকোর্টের আদেশ ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাঁর নজরে আসলে ঐ আট কর্মকর্তার বেতন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল এডভাইজারের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রেজারার দপ্তরের কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম। 

এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, পাঁচজন কর্মকর্তা পদোন্নতি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের কাগজ ইতোমধ্যে এসেছে। রিটের কাগজ অনুযায়ী কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় লিগ্যাল অফিসারের কাছে লিখত চেয়েছি, তিনি মৌখিক বলেছেন, পঞ্চম গ্রেডের বেতন দেওয়া হোক এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টের যখন পূর্ণাঙ্গ রায় দিবে সেই দায় তাদের পক্ষে গেলে তাদের এই বকেয়া বেতন সহ পেয়ে যাবেন।

Share.
Leave A Reply