বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতকে মামলা-হামলা করে আর জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করে ধ্বংস করতে চেয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় যুব সংহতির নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দানবীয় শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেয়নি। বিএনপিকে জেল-জুলুম করে ঘরছাড়া করেছিল। জামায়াতকে তো রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতেই দেয়নি। আর ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি করতে দেয়নি।

নিজ দলের কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ আমাদের মধ্যে একটি দালাল পার্টি তৈরি করে রেখেছিল। অবৈধভাবে তাদের জাতীয় পার্টির লোগো ও প্রতীক ব্যবহার করতে সহায়তা করেছিল আওয়ামী লীগ। টেলিভিশনে গিয়ে তারা জাতীয় পার্টি পরিচয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলত। ২০২৪ সালে বলা হলো, আপনি নির্বাচন না করলে অন্য কেউ জাতীয় পার্টির লাঙল নিয়ে নির্বাচন করবে। আমরা তাতে রাজি হইনি। পরবর্তী সময় বলা হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আপনারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।’

জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে না গেলে হয়তো অন্য একটি গ্রুপ জাতীয় পার্টির নামে নির্বাচনে যেত। দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বললেন, নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করে ফেলবে। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ দিয়েই এ ও বি টিম তৈরি করেছিল।’

এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘২০২৪ সালে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেভাবে স্বৈরাচারের দানবীয় শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছিল, আমরাও সেভাবেই পরাজিত হয়েছিলাম। রাজনীতি করতে গেলে একটি দল দরকার হয়। আবার সঠিক রাজনীতি না থাকলে দলও থাকে না। শুধু দল বাঁচাতে কিছু কম্প্রোমাইজ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি।’ এ বিষয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন, এমন অবস্থায় আপনি হলে কী করতেন?’

অনেকে জাতীয় পার্টি সম্পর্কে অপপ্রচার করছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে গিয়েছি, তাই নাকি আওয়ামী লীগ দানবে পরিণত হয়েছে। আমরা নির্বাচনে না গেলে কি নির্বাচন হতো না? আমরা নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগ কি ক্ষমতাচ্যুত হতো?’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আর নির্বাচন করে সরকার তো কোথাও বাধাগ্রস্ত হয়নি। সরকার বাধাগ্রস্ত হয়েছে জেদ ও অহংকারের কারণে।

১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে ভালো নির্বাচন হলেও দেশ ভালো সরকার পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু অসীম ক্ষমতা নিশ্চিতভাবেই মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। আর সেই ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধানকে বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই এই সংবিধানের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচনে যাকেই ক্ষমতায় বসাবেন, তিনিই ক্ষমতার জোরে দানব হতে বাধ্য।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের সংবিধান এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা দিয়েছে। একই ব্যক্তি নির্বাহী বিভাগ, সংসদ ও প্রায় শতভাগ বিচার বিভাগের প্রধান। সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ওই এক ব্যক্তির হাতে। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ কখনোই বাতিল করা যাবে না, এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়। সংবিধান সংশোধন করে গণভোট দেওয়ার বিধান থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি।’

জি এম কাদের আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চাই। তবেই আমরা বুঝতে পারব নির্বাচন বিষয়ে কতটা সংস্কার হলো, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন দানব না হতে পারে।’

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, শেরীফা কাদের, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান প্রমুখ। জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি এইচ এম শাহরিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী।

Share.
Leave A Reply