তারকাপুঞ্জ রিয়াল মাদ্রিদের রাজকীয় অবয়বের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা একটি শব্দ। বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের কিনে নিয়ে এসে ফুটবল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় নিয়েই চালিত হয় মাদ্রিদের ক্লাবটি। রিয়ালে তারকার ঠাসাঠাসি কখনো কখনো চূড়া স্পর্শ করে। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেমনটা হয়েছিল। সে সময় লুইস ফিগো, ডেভিড বেকহাম, জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, মাইকেল ওয়েন, রবিনিওর মতো তারকার পদচারণে রিয়াল পরিণত হয়েছিল ফুটবলের নন্দনকাননে।

তবে বাংলায় একটা কথা আছে, ‘যত গর্জে, তত বর্ষে না’। রিয়ালে সেই তারকাপুঞ্জের সাফল্যও প্রত্যাশার তুলনায় খুবই সামান্য। এই সময়ে মাত্র একটি লা লিগা ও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল রিয়াল। যেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাটি আবার গ্যালাকটিকোস যুগের আগের। রোনালদো নাজারিও এবং ডেভিড বেকহামের কপালে জোটেনি ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের সেই মুকুট। তাঁরা এসেছিলেন সেই ট্রফিটি জেতার পরে।

২০১৮ সালে শুরু হয় রোনালদো-পরবর্তী যুগ। প্রায় এক দশক পর রোনালদোকে ছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হয় রিয়ালকে। তবে রোনালদো–পরবর্তী যুগেও রিয়ালের সাফল্য কিন্তু একেবারে চমক জাগানো। এই ছয় বছরে তিনটি লিগ ও দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে রিয়াল। অভিজ্ঞ বেনজেমা, মদরিচ, ক্রুসদের সঙ্গে তরুণ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো ও বেলিংহামদের প্রচেষ্টাতেই আসে রিয়ালের এই সাফল্য। গত মৌসুমে একসঙ্গে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আরও একবার প্রমাণ করে রিয়াল তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে রিয়াল ভারসাম্যপূর্ণ দল হলেও সেটি গ্যালাকটিকোস ছিল না। রিয়ালের নতুন গ্যালাকটিকো তৈরি হয়েছে মূলত চলতি মৌসুমের শুরুতে। কিলিয়ান এমবাপ্পের আগমন এবং ভিনিসিয়ুস-বেলিংহামদের সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ জন্ম দেয় এই তারকাপুঞ্জের। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পাঁচজন ফুটবলারের তিনজনই রিয়ালে।

সাম্প্রতিক ট্রান্সফারমার্কেটে প্রকাশিত প্রথম চারজনের তিনজনই স্পেনের রাজধানীর ক্লাবটিতে। ফলে এই তারকাদের নিয়ে রিয়াল যে নতুন গ্যালাকটিকোস তৈরি করেছে, তা বলাই যায়। আর এখানেই রিয়াল সমর্থকদের যত শঙ্কা আর দুশ্চিন্তা! এই গ্যালাকটিকোসের পরণতিও কি আগেরগুলোর মতো হবে? এখনো শেষ কথা বলার সময় আসেনি। তবে আশঙ্কা উড়িয়েও দেওয়া যায় না।

লা লিগায় আট ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা বার্সার চেয়ে ৩ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে রিয়াল এই হারে রিয়ালের ৩৬ ম্যাচের অপরাজিত থাকার যাত্রাও শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে কোপা দেল রের শেষ ষোলোর ম্যাচে হেরেছিল রিয়াল। সেদিন আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে রিয়াল হেরেছিল ৪-২ গোলে। পাশাপাশি জয়-হার বাদ দিলেও রিয়ালের খেলা সেভাবে মন ভরাতে পারছে না। এমবাপ্পের মতো তারকার আগমনে যে আধিপত্য বিস্তারের প্রত্যাশা ছিল, তা–ও দেখা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত এত তারকা থাকার পরও কেন রিয়ালের এই দশা? তবে এটাও সেই ‘গ্যালাকটিকো-অভিশাপ’ নাকি ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট’? তা যেটাই হোক, রিয়ালের জন্য লিঁওর কাছে এই হার নিশ্চিতভাবেই সতর্কবার্তা। এই বার্তা আমলে না নিয়ে এড়িয়ে গেলে সামনের দিনগুলোয় বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবটিকে।

Share.
Leave A Reply